বন্যাকবলতি এলাকার জন্য আপদকালীন রোপা আমন ধানরে চারা উৎপাদন পদ্ধতি
দেশের কিছু কিছু এলাকা বর্তমানে বন্যাকবলিত। বন্যার কারণে কোথায়ও কোথায়ও বীজতলায় রোপা আমনের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় বন্যার পানির কারণে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে দেরি হয়ে যাওয়ায় স্বল্প জীবনকাল এবং আলোকসংবেদনশীল আমন ধানের চারা না পাওয়া গেলে বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান৪৬ এবং স্থানীয় জাত নাইজারশাইল, গাইঞ্জা, গড়িয়া, পরাঙ্গি, সাইট্যা, তুলশিমালা এসব জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ কিংবা আগ স্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে ছিটিয়ে বপন করা যেতে পারে। বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাভাবিক বীজতলা তৈরির উপযুক্ত জায়গা পাওয়া কষ্টকর। সেক্ষেত্রে দুইটি পদ্ধতিতে রোপা আমনের চারা তৈরি করা যায়-
০১. কলার ভেলায় ভাসমান বীজতলা ও
০২. দাপোগ বীজতলা
কলার ভেলায় ভাসমান বীজতলা : বন্যাকবলিত এলাকায় যদি বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকে এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রয়োজনীয় সময় না থাকে তবে বন্যার পানি, নদী, বিল, পুকুর, ডোবা বা খালের পানির ওপর কলাগাছ কেটে বাঁশ বা কঞ্চি দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে। কলাগাছের ভেলার ওপর হোগলা বা চাটাই দিয়ে সেখানে মাটির প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া বাঁশ এবং বাঁশের চাটাইয়ের মাচা অথবা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ পুকুরের তলার কিংবা মাটির পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলা তৈরি করা যায়। এছাড়া ভাসমান বেডের যেখানে শাক সবজির আবাদ করা হতো সেখানেও আপদকালীন সময়ের জন্য আমন বীজতলা তৈরি করা যায় অনায়াসে। বন্যার পানিতে যেন ভাসমান বেড যেন ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে।
এরপর মাটির আস্তরণের ওপর অঙ্কুরিত বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন পাখি বা অন্য কিছু নষ্ট করতে না পারে। ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স¦াভাবিক বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এক্ষেত্রে এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলা ব্যবহার করা যেতে পারে। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যেতে পারে। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার মতোই রোপণ করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার চারার মতোই হবে। উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজনে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।
দাপোগ বীজতলা : বাড়ির উঠান বা যে কোনো শুকনো জায়গায় অথবা কাদাময় সমতল জমিতে পলিথিন, কাঠ অথবা কলাগাছের বাকল দিয়ে তৈরি চৌকোনা ঘরের মতো করে তার মধ্যে অঙ্কুরিত বীজ ছড়িয়ে দিতে হয়। এ বীজতলায় মাটি থেকে চারাগাছ কোনোরূপ খাদ্য বা পানি গ্রহণ করতে পারে না বলে বীজতলায় প্রয়োজন মাফিক পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজতলায় প্রতি বর্গমিটারে সর্বোচ্চ ৩ কেজি অঙ্কুরিত বীজ দিতে হয়। এভাবে প্রস্তুতকৃত ২ থেকে ৩ বর্গমিটার দাপোগ বীজতলা থেকে উৎপাদিত চারা দিয়ে এক বিঘা জমি রোপণ করা যায়। দাপোগ বীজতলার প্রস্থ প্রায় ১.৫ মিটার এবং দৈর্ঘ্য প্রয়োজনমতো নিতে হবে। এভাবে করা বীজতলা থেকে ১৪ থেকে ১৫ দিন বয়সের চারা জমিতে রোপণ করতে হবে। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে চারার গুণগতমান নষ্ট হতে থাকে। চারার বয়স কম থাকে বলে অনেক সময় চারার মৃত্যুহার কিছুটা বেশি থাকে। সেজন্য চারা রোপণের সময় প্রতি গোছায় ৪ থেকে ৫টি চারা দিলে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা যায়। দাপোগের চারার উচ্চতা কম থাকে বলে জমিতে লাগানোর সময় এমন পরিমাণ পানি রাখতে হবে যাতে করে চারা পানির নিচে ডুবে না যায়। এক্ষেত্রে রোপিত চারার সব পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্যসব চারার মতোই হবে। দাপোগ পদ্ধতিতে লাগানো চারা পরবর্তীতে অন্যান্য স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষকভাইয়েরা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে কাক্সিক্ষত ফলন পেয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারবেন।
এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কৃষিবিষয়ক তথ্য পেতে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে কৃষি কল সেন্টারে ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করুন।
সূত্রঃ কষি তথ্য সার্ভিস
উত্তর সমূহ